দুঃশ্চিন্তায় মা...
মাজেদুল নয়ন
Collected from Facebook
ঢাকা: রাত জেগে কথা হচ্ছিল একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে। তার কাছ থেকে শুনলাম মা’এর ভালবাসা আর উদ্বেগেরকথা।
বললেন...
রাত ৯টার দিকে আমার মাকে ফোন দেই। আমি আস্তে কথা বললেও ওপাশ থেকে জোরে
জোরে মা জানান, ‘আই বালা আছি, তুই কোনাই? কেইন্না আছত?’ ভাল বলার আগেই মা
আবারো জিজ্ঞাসা করেন, ‘বালা নাই কিল্লাই?’ মায়ের একটা স্বভাবজাতধারনা তার
সন্তান ভাল থাকে না।
প্রযুক্তির
আধুনিকতা মা হয়তো এ পরিমান এখনো গ্রহণ করতে পারেননি, যে ফোনে স্পষ্ট কথা
শোনার মতো। তাই শোনার চেয়ে বলেন বেশি। অনেক আগে একদিন আমাকে বলেছিলেন,
‘আস্তে কথা হুনা যায় না, হেল্লাই জোরে জোরে কতা কই।’
এক
সময় ঢাকায় আমাদের বাসায় দাদী বেড়াতে এসেছিলেন, এটা ২০০০ সালের দিকে।
বিকাল না হতেই উনি বারবার বারান্দায় আসা যাওয়া করতেন। দো’ তলার বারান্দা
থেকে বাড়িতে ঢোকার গেট দেখা যেত। একটু পরপর প্রশ্ন করতেন ‘তোর আব্বা কোই?
কতক্কনে আইব?’ দুঃচিন্তায় থাকতেন তিনি।
একদিন
সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাবা ফিরেননি বাসায়। দেখলাম, দাদী মন খারাপ করে বসে
আছেন। হয়তো শিক্ষিত নাতিরা যেন বিরক্ত না হয়, সেজন্যে কিছুই জিজ্ঞাসা
করছিল না।
নিজ থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘দাদি কি করেন?’ প্রায় ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা দাদী মানুষের কাছ থেকে
শুনে শুনে কিছু ইংরেজি শব্দ শিখেছিলেন। আমাকে জবাব দিলেন, ‘টেনশন করি’।
আসলে বৃদ্ধা দাদী বুঝে গিয়েছিলেন উনার আর কিছু করার নাই চিন্তা করা ছাড়া।
এখন আর এমন অবস্থা নাই, যে আমার বাবাকে খুজে বের করে নিয়ে আসবেন।
আমার
মা’য়েরও হয়তো এখন আর চিন্তা করা ছাড়া কোন গতি নেই। খেলার মাঠ থেকে ধরে
আনার সময় এখন আর নেই। আগের মতো শাসন করতে পারেন না। এখনো চোখে চোখে রাখতে
ইচ্ছে হলেও, সবসময় জিজ্ঞাসা করতে পারেন না, ‘কেমন আছো’।
সামনাসামনি আমাকে তুই বলে সম্বোধন করলেও অনেক সময় ফোনে ‘তুমি’ বলে ভদ্র শব্দে সম্বোধন করেন মা।
একমাসও
হয়নি বাড়ি থেকে এসেছি, মা জিজ্ঞাসা করলেন ‘বাড়ি আসবা কবে?’ বললাম
‘কয়েকদিন আগেইতো আসছিলাম, আবার পরে আসব’। চুপ করে থাকেন মা, হয়তো মাসের
দিনগুলোর হিসাব করছিলেন। অন্য ভাইদেও কথা জিজ্ঞাসা করেন। বলেন,
তোমাদেরজন্যে ‘টেনশন লাগে’।
আমার
দাদী একসময় চিন্তা করতেন বৃদ্ধ দাদাকে নিয়ে। ঘর সংসার, শ্বশুর-শাশুড়ি-
সস্তানদের নিয়েই ছিল চিন্তার জগৎ। এখন আমার মায়ের চিন্তাও তাই। দাদী-মা
উনাদের আর্থিক আয় ছিল না। জীবনের চাওয়া পাওয়া ছিল সংসার আর সন্তানদের
নিয়ে।
যুগ যুগ ধরেই মায়েরা রয়েছেন এসব দুঃচিন্তায়। সৃষ্টিগত কারনেই হয়তো মায়েদের স্বভাবসন্তানকে নিয়ে চিন্তা করা।
সকালে
শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় যেসব
মায়েদের দেখা যায়, তাদের মুখেও থাকে চিন্তার ছাপ। সন্তানের স্কুলের
পড়াশোনা ণিয়ে চিন্তা তাদের।
সন্তান
জন্ম নেওয়ার আগ থেকেই সন্তানকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন মা। সন্তানের কবে
কথা বলতে শুরু করবে, হাটতে শুরু করবে এসব চিন্তায় থাকেন। তারপর ‘এ, বি,সি,
ডি আর ক খ গ ঘ শেখানোর পালা। এরপর চিন্তায় পড়েন স্কুলে পাঠাতে হবে।
সন্তান কর্মক্ষেত্রে চলে গেলেও শেষ হয় না মায়ের চিন্তা। সন্তানের বয়স বাড়ে না তার কাছে। সন্তানকে নিয়েই ভাবতে ভাল লাগে তার।
আমার
বাবা ভাত নরম হলে খেতে পারতেন না। পুরুষশাসিত সমাজে তার শাসনের বৈশিষ্ঠ
হিসেবে বকাঝকা শুরু করতেন মাকে। অনেকদিন দেখেছি, একটু অমনোযোগীতার কারণে
ভাত নরম হয়ে গেলে আসন্ন বকার ভয়ে কি দুঃচিন্তায় থাকতেন তিনি। বড় বাটিতে
বেড়ে বারবার পাখা দিয়ে বাতাস করতেন, ঠান্ডা হয়ে একটু শক্ত হওয়ার
জন্যে।
শুধু
রফিকের মা নয় সংসারে রান্না সর্ম্পকিত ভয়ে এভাবেই দুঃচিন্তায় ভুগতে
থাকেন মায়েরা। মায়েদের এ চিন্তা অনেক বেশী, যা আমদের কাছে হয়তো সাধারন।
উচ্চবিত্ত,
মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, সকল পরিবারেই দুঃশ্চিন্তায়ভোগেন মায়েরা। আর্থিক
টানাপোড়ন বা সচ্ছলতা যাই থাকুক না কেন, সন্তানের জন্যে তাদের দুঃশ্চিন্তার
শ্রেনীভেদ নেই।
সন্তান মায়ের কাছ থেকে যত দূরে যায়, চিন্তাও তার ততই বাড়ে। একমাত্র ঘরে তার আশপাশে ঘোরাঘুরি করলেই চিন্তামুক্ত থাকেন তিনি।
মাকে
দেখতে যাওয়ার জন্যে এপ্রিল মাসে অফিসে ছুটির আবেদন করলাম। দেরি হচ্ছিল
ছুটি দিতে। অস্থির মা জিজ্ঞাসা করল ‘বাড়ি আইবি কবে?’ বললাম ‘ছুটি দিচ্ছে
না অফিস থেকে।’ অন্ধ ভালবাসায় মায়ের পাল্টা জবাব, ‘চাকরি করন লাগদো ন,
তুই চলি আয়’।
‘মা দিবস’ নয় এমনি আমার মা’য়ের জন্যে ভালবাসা। আমাদের সকলের মায়ের জন্যে ভালবাসা।
Collected by
0 comments:
Post a Comment
Thanks for your comments.